ক্যানসারের লক্ষণ

ক্যান্সারের বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। যেগুলো প্রথম পর্যায়ে দেখা দিলেই সাবধান হওয়া দরকার এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চলুন জেনে নেয়া যাক ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো-

মুখের ক্যানসার: মুখের ভেতরে গালে, মাড়িতে, দাঁতের পেছনে বা জিহ্বার কোনো অংশের দীর্ঘদিনের ঘা মুখের ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ। রোগীর যদি পান-জর্দা-তামাক খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে তা ক্যানসারের সন্দেহকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

লসিকাগ্রন্থির ক্যানসার: দেহের যেকোনো অংশের শক্ত চাকা সে অংশের বা অন্য কোনো স্থানের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। লিম্ফোমা নামক ক্যানসার এভাবে প্রকাশ পায়। এর সঙ্গে রোগীর জ্বর, রাতে প্রচণ্ড ঘাম ও দ্রুত ওজন হ্রাসের ইতিহাস থাকতে পারে।

স্বরনালির ক্যানসার: গলার স্বর বসে যাওয়া একই সঙ্গে স্বরনালি, ফুসফুসসহ আরও বেশ কিছু ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এসব রোগীর যদি ধূমপান, জর্দাসহ পান বা তামাক খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে তা ক্যানসারের সন্দেহকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।

পাকস্থলীর ক্যানসার: ঢোঁক গিলতে কষ্ট হওয়া, খাওয়ার পরে বমি বা বমি বমি ভাব হওয়া, অল্প খেলেও পেট ভরা ভরা লাগা-অন্ননালি বা পাকস্থলীর ক্যানসারের লক্ষণ। অপর্যাপ্ত খাওয়াদাওয়ার জন্য এসব রোগীর দ্রুত ওজন হ্রাসের ইতিহাস থাকে।

বৃহদন্ত্র ও মলদ্বারের ক্যানসার: মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, মলের সঙ্গে রক্তপাত বৃহদন্ত্র, মলাশয় বা মলদ্বারের ক্যানসারের লক্ষণ। এ ছাড়া বংশের কারও বৃহদন্ত্র, মলাশয়ের ক্যানসার হয়ে থাকলে তবে তা ক্যানসারের সন্দেহকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই কোনো লক্ষণকে অবহেলা না করে দ্রুত ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

পেটে ব্যথা, পেটে পানি আসা, পেটে চাকা অনুভব, পেটের নানা ধরনের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। তাই এসব লক্ষণ থাকলে ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ত্বকের ক্যানসার: ত্বকের তিল বা আঁচিলের দ্রুত আকার বৃদ্ধি, রং পরিবর্তন কিংবা ঘা ত্বকের ক্যানসারের লক্ষণ। যদিও আমাদের দেশে এসব ক্যানসারের হার কম, তবু অবহেলা না করে দ্রুত চর্মরোগ এবং ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ফুসফুসের ক্যানসার: দীর্ঘমেয়াদি কাশি, যা সাধারণ চিকিৎসায় নিরাময় হচ্ছে না, এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বা গলার স্বর বসে যাওয়া এবং কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া ফুসফুসের ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ। রোগী যদি ধূমপান করেন, জর্দাসহ পান বা তামাক খান, তবে তা ক্যানসারের সন্দেহকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই যক্ষ্মা ভেবে চিকিৎসা করে অকারণ দেরি করা হয়। কাশি হলে অনেকে নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক ও কাশির ওষুধ, ইনহেলার ব্যবহার করে থাকেন। এটি একটি মারাত্মক ভুল। তাই এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

স্তনের ক্যানসার: স্তনে বা বগলে দ্রুত বড় হতে থাকা শক্ত চাকা, কখনো ঘা স্তন ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ। কখনো স্তনের বৃন্ত দিয়ে রক্ত যেতে পারে। কখনো স্তনের চামড়া কমলার খোসার মতো শক্তও হয়ে যেতে পারে। মাসিকের সঙ্গে এসব চাকার হ্রাস-বৃদ্ধির তেমন সম্পর্ক না থাকলেও দ্রুত ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া বংশে কারও স্তন ক্যানসার হয়ে থাকলে সামান্য লক্ষণও অবহেলা করা যাবে না।

জরায়ুমুখে ক্যানসার: মাসিক রাস্তা দিয়ে সাদা স্রাব, অস্বাভাবিক রক্তপাত, যৌন মিলনের সময় ব্যথা জরায়ুমুখ বা জরায়ুর ক্যানসারের লক্ষণ। পাশাপাশি জন্মবিরতিকরণ পিল, অত্যধিক সন্তান, অসামাজিক যৌনজীবনের ইতিহাস ক্যানসারের সন্দেহকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই এসব লক্ষণকে অবহেলা না করে দ্রুত মহিলা রোগ এবং ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

মূত্রথলির ক্যানসার: প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত মূত্রনালি বা কিডনির ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত কিডনি রোগ এবং ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

মস্তিষ্কের ক্যানসার: হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, স্মৃতিশক্তি লোপ মস্তিষ্কের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এমনও হতে পারে, এটি মস্তিষ্কের প্রাথমিক ক্যানসার কিংবা অন্য স্থানের ক্যানসার মস্তিষ্কে ছড়িয়েছে। এসব লক্ষণ অবহেলা না করে দ্রুত মস্তিষ্ক রোগ এবং ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

তবে মনে রাখা দরকার, এ ধরনের লক্ষণ প্রকাশ মানেই কিন্তু ক্যানসার হওয়া নয়। আরও নানা কারণেই এসব উপসর্গ হতে পারে। ক্যানসার নিশ্চিত হতে ধাপে ধাপে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। যত দ্রুত আর প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে ততই ভালো।

Loading

Admin

By Admin

ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, পল্লী চিকিৎসক

Leave a Reply