ক্যান্সারের বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। যেগুলো প্রথম পর্যায়ে দেখা দিলেই সাবধান হওয়া দরকার এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চলুন জেনে নেয়া যাক ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো-
দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি : আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তিবোধ করেন বা অবসাদে ভোগেন, তবে সেটা অনেক রোগের কারণই হতে পারে এবং ক্যান্সারের কারণও হতে পারে। মলাশয়ের ক্যান্সার বা রক্তে ক্যান্সার হলে সাধারণত এমন উপসর্গ দেখা যায়।
ওজন কমে যাওয়া: কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই দ্রুত গতিতে যদি ওজন কমতে থাকে তবে তা চিন্তার বিষয়। কারণ, এটি ক্যান্সারের অন্যতম উপসর্গ।
দীর্ঘদিনের ব্যথা: কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোনো অংশে যদি ব্যথা হয় আর তাতে ওষুধেও যদি কাজ না করে, তাহলে বিষয়টি নিয়ে ভাবনার যথেষ্ট কারণ আছে। তবে শরীরের কোনো জায়গায় ব্যথা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করছে রোগীর ব্রেইন টিউমার বা মলাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে কি-না।
অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড: শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক কোনো মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি দেখা দিলে বা মাংস জমাট হলে কিংবা এ ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় হলে ক্যান্সারের উপসর্গ হতে পারে। এসব বিষয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘন ঘন জ্বর: শরীরে ক্যান্সার জেঁকে বসলে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এতে ঘন ঘন জ্বর হতে পারে। ব্ল্যাড ক্যান্সারে ঘন ঘন জ্বর হয়।
ত্বকে পরিবর্তন: ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তনই ক্যান্সার শনাক্ত করার সহজ উপায়। ত্বকে অতিরিক্ত তিল বা ফ্রিকেল অথবা আঁচিলের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। যদি আঁচিলের রঙ, আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
দীর্ঘস্থায়ী কাশি: ওষুধ খাবার পরও কাশি না ভালো হলে বা কাশির কারণে বুক, পিঠ বা কাঁধে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সামান্য কাশি ভেবে একেবারেই ফেলে রাখা ঠিক নয়।
মল-মূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন : যদি ঘন ঘন মল-মূত্রের বেগ অনুভব হয় তাহলে ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ঘন ঘন ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও মলাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ। মূত্রত্যাগের সময় অন্ত্রে ব্যথা বা রক্তক্ষরণ মূত্রথলির ক্যান্সারের উপসর্গ।
অকারণে রক্ত ক্ষরণ: কাশির সময় যদি রক্তক্ষরণ হয় তাহলে এটি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারি। এছাড়া জনিপথ বা মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণসহ এ ধরনের অন্যান্য অস্বাভাবিকতাও ক্যান্সারের উপসর্গ।
খাবারে অনিচ্ছা : নিয়মিত বদহজম পেট, কণ্ঠনালী বা গলার ক্যান্সার নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে। সাধারণত এসব উপসর্গকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। তবে এড়িয়ে যেতে নেই।
অন্যান্য উপসর্গ : এগুলো ছাড়াও ক্যান্সারের আরও বিভিন্ন লক্ষ্য দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে- পা ফুলে যাওয়া, শরীরের আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি।
তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারলে বেশিরভাগ ক্যান্সারেরই চিকিৎসা ও নিরাময় সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ক্যান্সারে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। যে বিষয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে, যেমন- সিগারেট, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত ওজন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিতে হবে।
এছাড়া স্বাস্থ্যকর একটি জীবনযাপন প্রক্রিয়া বেছে নিতে হবে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো ক্ষেত্রে ভালো পথ। কারণ, গবেষকেরা বলছেন, পৃথিবীতে অন্তত ২০০ ধরনের ক্যান্সার রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই রয়েছে যেগুলো আক্রান্ত হওয়ার পর মানুষের সুস্থ হওয়ার হার অনেক বেশি, যেমন- স্তন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার। ফলে অবহেলা না ভয় না পেয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।